চালতা ফলের উপকারিতা ও অজানা কিছু অপকারিতা
আমরা অল্প সল্প সব ফলের সাথেই পরিচিত বা নাম শুনেছি।কিন্তু এসব ফলের
উপকারিতা-অপকারিতা জানার কোন আগ্রহ দেখাই না।
শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে যখন কঠিন কঠিন অসুখে ভুগি তখন কেজি কেজি ঔষুধ সেবন
করি ভিটামিনের ঘাটতি পুরন করতে।আজ আমরা চালতার এমন গুণের কথা জানব যা ঔষুধের
ন্যায় কাজে আসবে।
পেজ সূচিপত্র
চালতা ফলের উপকারিতা
চালতা ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হবেন। কেননা এটি একটি বুনো
অবহেলিত ফল।চলুন জেনে নি এর উপকারিতা কি কি।
- চালতা ফল স্কার্ভি ও লিভারের রোগ প্রতিরোধ করে।কারন চালতা ভিটামিন সি তে ভরপুর একটা ফল।
- আমাদের শরীরে দু ধরনের কোলেস্টেরল আছে একটি ভালো কোলেস্টেরল আর অন্য টি খারাপ কলেস্তেরল।চালতা আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল ও ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
- চালতা আয়রন সমৃদ্ধ একটি ফল যা শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করে রক্ত স্বল্পতা দূর করে।
- চালতাতে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হাড় ও দাত গঠন করে।
- আন্টিঅক্সিডেন্ট আছে চালতা ফলে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়ক।তাই নিয়মিত চালতা খেলে আমাদের বেস্ট ক্যান্সার ইউত্রাস ক্যান্সার সহ সব ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- কিডনির ক্যান্সার সহ নানান প্রকার সমস্যা সমাধান হবে চালতা ফল খেলে।
- ডাইরিয়া ও বদ হজম প্রতিরোধ করতে চালতা বেশ ভালো কাজ করে।
- চালতাতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকাতে এটা হার্টের নানা সমস্যা প্রতিরোধ করে।
- শীতকালে আমাদের সর্দি কাশি সহ নানা রকমের সমস্যা হয়ে থাকে। এগুলো থেকে রেহাই পেতে চালতা ভীষণ উপকারি।
চালতার উৎপত্তি ও নাম
বনে জঙ্গলে জন্ম নেওয়া বৃক্ষ চালতার প্রথম উৎপত্তি হয় দক্ষিণ -পূর্ব-এশিয়ায়।তবে
চালতা সবচেয়ে বেশি জন্মায় ভারতে।এই ফলের বৈজ্ঞানিক নাম ডিলেনিয়া ইনডিকা( Dillenia
indica) আর ইংরেজি নাম Elephant apple.এটি একটি চিরহরিৎ জাতীয় বৃক্ষ।
বহু আগে থেকে চালতা ফল হিসাবে নয় বরং ঔষুধি উপকরন হিসাবে সবার কাছে কম বেশি
পরিচিত।
প্রকৃতির শোভা বর্ধনে চালতা গাছ
মাঝারি আকারের এই গাছ দেখতে অনেক সুন্দর।এর ফুলের রং সাদা এবং সুগন্ধযুক্ত।এই
ফুলে পাঁচটি পাপড়ি থাকে।বর্তমানে বাড়ির উঠানের পাশে চালতা গাছ দেখা যায়।লালচে
বাকল বিশিষ্ট গাছের সবুজ পাতা প্রকৃতিকে অপরুপ সৌন্দর্যে সাজিয়ে রাখে।
বর্তমানের আধুনিক যুগে মানুষ যেভাবে গাছ কেটে প্রাসাদ তৈরি করছে তাতে প্রকৃতির
অনেক ক্ষতি হচ্ছে।তাই আমি-আপনি যদি আমাদের বাড়ির আশে পাশে চালতা গাছ লাগাই তাহলে
একদিকে যেমন ছায়া পাব অন্য দিকে পরিবেশ রক্ষা পাবে।
চালতা খাওয়ার নিয়ম
চালতা টকজাতীয় ফল বলে যারা টক পছন্দ করে তাদের কাছে ভীষন প্রিয়।চালতা দিয়ে
পছন্দ মত ঝাল,টক,মিষ্টি সব রকমের আচার তৈরি করা যায়।
আরও পরুনঃ পাথরকুচি পাতার জাদুকরী উপকারিতা
আর পাকা চালতা শুকনো মরিচ ও লবণ দিয়ে মাখানোর কথা শুনলেই জিভে জল এসে
যায়।চালতার রয়েছে ঔষুধি গুণ।
চালতায় বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানসমূহ
চালতার পুষ্টি উপাদানের কথা জানতে চাইলে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান
পুষ্টি কর্মকর্তা আখতারুন নাহার বলেন এতে আছে,
- ক্যালসিয়াম
- শর্করা
- আমিষ
- বিটা ক্যারোটিন
- ভিটামিন বি
- ভিটামিন সি
- থায়ামিন
- রিবোফ্লাবিন প্রভূতি।
যেগুলো শরীরে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে শরীর সুস্থ রাখে।চালতাকে হার্টের
টনিক বলা হয়।এতে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি রয়েছে যা স্কার্ভি ও লিভারের সমস্যা
প্রতিরোধ করতে ব্যবহার হয়।চালতায় বিদ্যমান থাকা বিভিন্ন উপাদানের জন্য
চালতাকে প্রকৃতির ঔষুধ বলা হয়।
চালতা পাতার উপকারিতা
চালতা পাতার রস ডাইরিয়া সারাতে ভীষন উপকারী।সর্দি ও কাশির জন্য চালতা পাতার
রসের তুলনা নেই।রক্ত আমাশায়ের জন্য চালতার কচি পাতার রস খেলে খুব উপকার পাওয়া
যায়।চালতার রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।এটি রক্ত পরিষ্কার রাখে।
চালতাকে যেহেতু প্রাকৃতিক ঔষধ বলা হয় তাই এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।তবে
প্রধান প্রধান কয়েকটি গুনাগুণ নিচে তুলে ধরা হলো-
- বাতের ব্যাথায় চালতার রস পানির সজ্ঞে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- বদহজম ও কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দুর করতে সহায়ক।
- বাচ্চাদের পেটের সমস্যায় চালতার রস খুবই ফলদায়ক।
- মহিলাদের জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
- কিডনি ভালো রাখে।
- ত্বকের ক্ষতজনিত যন্ত্রণা প্রশমিত করে।
- শক্তিবর্ধক হিসাবে কাজ করে।
তাছাড়াও চালতা প্রাকৃতিক এসিড-অক্সালিক,ট্যানিক,ম্যালিক প্রভূতি এসিডে সমৃদ্ধ
যা ত্বক সুস্থ রাখে।
চালতা রক্ত পরিশোধন করে।যাদের কিডনি সমস্যা আছে তারা নিয়মিত চালতা পাতার রস
খেলে উপকার পাবেন।
চালতার অজানা কিছু অপকারিতা
চালতা একটি টক জাতিও ফল তাই বেশি পরিমান খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভাল।তাছারা
চালতা খেলে কিছু সুনির্দিষ্ট সমস্যা হয়ে থাকে। যেমন-
অ্যাসিডিটিঃ আমি আপনি সকলেই কম বেশি এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি।চালতা
টক ফল বলে এতে এই সমস্যা আরও বেড়ে জেতে পারে।
অ্যালার্জিঃ অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। জেমন-গায়ে ফুসকুড়ি,শ্বাসকষ্ট
সহ নানা সমস্যা হতে পারে।এরকম হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সর্তকতা
গর্ভবতী ও দুগ্ধ দান কারি মা'র জন্য এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
শেষ কথা
চালতা একটি ঔষধি গাছ। এই বহুবিদ রোগের মহা ঔষধ হিসেবে পরিচিত ফলটি আমাদের
নিয়মিত খাওয়া উচিৎ।যদিও এটি মৌসুমী ফল তবে এটি নিজের পছন্দ মতো আচার বানিয়ে ঘরে
সংরক্ষণ করে সারা বছর খেতে পারেন।
কাঁচের পাত্রে আচার সংরক্ষণ করলে স্বাদ ঠিক থাকবে।বাড়ির আঙ্গিনায় এই ঔষধি
গাছটি লাগালে এক দিকে যেমন বাড়ির শোভা বৃদ্ধি পাবে অন্য দিকে প্রিয় ফলটিও সহজে
পাওয়া যাবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url