জেনে নিন ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে দশটি তথ্য
জাফরানের ২০ উপকারিতা ও অপকারিতা - জাফরান ব্যবহারের নিয়ম ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে বর্তমানে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। কেননা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমানে অনেক বেশি। গ্রামে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কম হলেও শহরে এই প্রকোপ অনেকটা বেশি। অনেক সময় শহরের হাসপাতালগুলোতে জায়গা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
শরীরে কোন লক্ষণ গুলো দেখলে বুঝবেন আপনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত
হয়েছেন,আপনার করণীয় কাজ কি কি,কেমন খাবার গ্রহন করবেন,হাসপাতাল না বাড়িতে কোথায়
থেকে চিকিৎসা নেবেন,কোন বিষয় গুলো এড়িয়ে চলবেন প্রভূতি এই পোস্ট পড়ে জানতে
পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্র
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো কি কি
সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর জ্বর একটানা থাকতে পারে আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবার জ্বর আসতে পারে তবে নিম্নোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে বুঝবেন আপনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত।- উচ্চ জ্বর (১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২° তাপমাত্রা থাকতে পারে)
- তীব্র মাথাব্যথা
- চোখের পিছনে ব্যথা
- পেশী এবং জয়েন্ট ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- ফুসকুড়ি
- দ্রুত শ্বাস- প্রশ্বাস
- ক্লান্তি অস্থিরতা
- খুব তৃষ্ণার্ত হচ্ছে এমন ভাব
- ফেকাসে এবং ঠান্ডা ত্বক
- অবিরাম বমি
- নাক দিয়ে রক্তপাত
ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল
সাধারনত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এই সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। ডেঙ্গু ফিভার ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস। যখন ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা কাউকে কামড়ায় মশার লালার মাধ্যমে ভাইরাস ত্বকের ভিতর প্রবেশ করে। ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা।কখনো অন্ধকারে কামড়ায় না সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে ওঠে। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ বলেছেন "এডিস মশা ভদ্র মশা" হিসেবে পরিচিত। এসব মশা সুন্দর সুন্দর ঘরবাড়িতে ডিম পাড়ে। স্বচ্ছ পানিতে ডিম পেড়ে এরা বংশ বিস্তার করে ।
তবে জুলাই থেকে বলা হলেও এখন জুন মাস থেকেই এর প্রকোপ দেখা যায় । এই সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় ।যেহেতু বর্ষা মৌসুম তাই যেখানে সেখানে পানি জমে সহজেই।ফলে ডেঙ্গু মশা অনেক বেরে যায় ।গ্রীষ্মকালীন ঋতু হওয়ায় গরম তাকে বেশি ।যার জন্য মানুষ যেখানে সেখানে ঘুরে বেরায়।ফলে এডিস মশা বংশ বিস্তারের সুযোগ পায় ।
ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। এই ভাগ গুলো হচ্ছে- এ, বি, এবং সি।
- এ ক্যাটাগরিঃ এ ক্যাটাগরি রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী এ ক্যাটাগরির হয়ে থাকে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন প্রয়োজন নেই।
- বি ক্যাটাগরিঃ বি ক্যাটাগরি ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমন তার পেট ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচু্র, কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। বি ক্যাটাগরি রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় ভালো।
- সি ক্যাটাগরিঃ সি ক্যাটাগরি ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আই সি এর প্রয়োজন হতে পারে।
যে টেস্ট গুলো করাতে হয়
ডেঙ্গু হয়েছে কিনা সেটি বোঝার একমাত্র উপায় হল রক্ত পরীক্ষা। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন রক্তের বেশ কিছু পরীক্ষা আছে। যেগুলোর একবার বা একাধিক বার টেস্ট করাতে হয় রোগীর অবস্থা বুঝে। সাধারণত যেসব পরীক্ষা করাতে হয় তার কয়েকটি সম্পর্কে কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হলোঃ- ডেঙ্গু এনএস 1ঃডেঙ্গু এন এস এন্ড টেস্টের মাধ্যমে কেউ ডেঙ্গু পজেটিভ কিনা সেটি দেখা যায়। সংক্রমিত হবার শুরুর দিকে পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটিকে সনাক্ত করা যায়। তবে এই পরীক্ষাটির জ্বর আসার প্রথম দিনেই করে নিতে হয়। চতুর্থ বা পঞ্চম দিন হলে এটির রেজাল্ট নেগেটিভ হয়ে যায়। কিন্তু এর বেশি দিন হয়ে গেলে তখন আর এ পরীক্ষা করে খুব একটা ভালো ফল পাওয়া যায় না।
- আইজিএমঃসাধারণত জ্বর হয়ে যাওয়ার চার-পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে এবং এর মধ্যে কোন পরীক্ষা না হয়ে থাকলে এই পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু পজেটিভ কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই সাধারণভাবে জ্বর আসার 5 দিন পরে এই টেস্ট করতে দেন চিকিৎসকরা । রক্তে আইজিএম পজিটিভ থাকলে বুঝতে হবে বর্তমানের রোগীর সংক্রমণ রয়েছে।
- আইজিজিঃশরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা আছে সেটা বোঝার জন্য চিকিৎসক এই পরীক্ষাটি দিয়ে থাকেন। রক্তে আইজিজি পজিটিভ থাকলে বুঝতে হবে আগে রোগের সংক্রমণ ছিল এবং বর্তমানে সে তৃতীয়বারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আইজিজি সুচোক স্বাভাবিকের চেয়ে কম মানে হল শরীর যথেষ্ট এন্টিবডি তৈরি করতে অক্ষম এবং সে ক্ষেত্রে সংক্রমনে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে সি বি সি চিকিতসকরা বলেছেন শরীর সম্পর্কে একটি বেসিক ধারণার জন্য এ পরীক্ষাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি মূলত একটি সামগ্রিক রক্ত পরীক্ষা। এই টেস্টের মাধ্যমে রক্তের প্রয়োজনীয় কষীয় উপাদানের ঘনত্বের পরিমাপের পাশাপাশি শরীরে কোন অস্বাভাবিকতা আছে কি না পর্যালোচনা করা হয়।রক্ত কণিকায় স্বাভাবিক কি না বা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কেমন এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝার জন্য চিকিৎসকরা টেস্ট দিয়ে থাকেন।
- পি টিঃপ্রথ্রম্বিন টাইম বা পি টি হলো আমার একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে রক্তের তরল অংশের প্লাজমার জমাট বাঁধতে কতটা সময় নেয় তা পরিমাপ করে। সাধারণত অস্বাভাবিক রক্তপাতের কারণ নির্ধারণে কিংবা লিভার কতটা ভালো কাজ করছে সেটি জানার জন্য চিকিৎসক অনেক সময় এই টেস্টের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- আই এন আরঃইন্টারন্যাশনাল নরমাল আইজড রেশিও এমন একটি রক্ত পরীক্ষা যার মাধ্যমে জানা যায় যে রক্ত জমাট হতে কতটা সময় লাগে।
- বিটিসিটি ব্লিডিং টাইম প্লাটিং টাইমঃ এই টেস্টির মাধ্যমে রক্তের ১৩ টি ফ্যাক্টর নির্ণয় করা যায়। ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে এই টেস্ট খুব একটা দরকার হয় না। তবে চিকিৎসক যদি মনে করেন বিশেষ জটিলতায় আক্রান্ত তখন এ টেস্ট করার পরামর্শ দিতে পারেন।
যেসব ঔষধ খাবেন
জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। তবে বেশি রোগীর শিরায় স্যালাইন দিতে হতে পারে। মারাত্মক রূপ ধারণ করলে রোগীকে রক্ত দিতে হতে পারে। ডেঙ্গ জ্বরে আক্রান্ত হলে কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও ননস্টেরওয়েডাল ঔষধ সেবন করা যাবে না।স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।চিকিৎসকরা বলেছেন প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম।
যেসব ওষুধ খাওয়া উচিত নয়
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক পর্যায়ে ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি এবং জ্বর বা ব্যথার জন্য অ্যাসিটামিনোফেন, অ্যাসপিরিন এবং এনএসএআইডি এর মত আইবুপ্রোফেন এড়ানো উচিত। কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।যেসব খাবার খাওয়া উচিত
ডেঙ্গু জ্বরের সময় প্লাটিলেটের সংখ্যা ও হিমোগ্লোবিন কমে যায়। হিমোগ্লোবিন মাত্রা ঠিক রাখতে এবং প্লাটিলেট তৈরি করতে শরীরের প্রচুর আয়রনের প্রয়োজন হয়। অন্ত্র থেকে আয়রন শোষণের জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাবার প্রয়োজন। এই ভিটামিন অ্যান্টিভাইরাস এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে বেশি পরিচিত। তাই কমলা জাম্বুরা আনারস লেবু জাতীয় ফল খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।এছাড়াও কলিজা, ডিম, ডালিম, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, বিট জুস, খেজুর ,কিসমিস জলপাই সবুজ শাকসবজি প্লাটিলেট ও হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে ।তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খাদ্য তালিকায় এ সকল খাদ্য সমূহ থাকা অত্যন্ত জরুরী।
প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ ও মুরগির পাতলা ঝোল দেওয়া যেতে পারে। ডাবের পানি ও ওরাল স্যালাইন ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়
যদি জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া ও বমি হয়ে থাকে তবে শাকসবজি ডাল দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। অতিরিক্ত তেল মসলা জাতীয় খাবার পাকস্থলীকে অ্যাসিটিক করে তোলে। তাই এ খাবারগুলো পরিহার করা উচিত । চা কফি শরীরকে পানি শূন্যতা করে তাই এ সময় এ ধরনের খাবার এগিয়ে চলা উত্তম।ডেঙ্গু জ্বরে পুরুষরা আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু হার বেশি নারীদের
ডেঙ্গু তে নারীদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ডক্টর শাহাদাত হাসান বলেন জেনেটিক কারণে নারীদের জটিলতা বেশি দেখা দেয়। আর এ কারণে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়ার হার বেশি। এছাড়াও গর্ব অবস্থায় ও ঋতুস্রাব কালে কোন নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের মৃত ঝুঁকি বেশি থাকে। মিস্টার হোসেন আরো বলেন পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে নারীরা তাদের
যত্ন নেন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত ৮৯ হাজার ৮০৩ জন। জার মধ্যে ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছে ৪৭৫ জন।
করোনা পরবর্তীতে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে। ডেঙ্গু জরে মৃত্যু বেড়েই
চলেছে।তাই এই জ্বরে আক্রান্ত হলে দেরি না করে দ্রত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url