লটকন ফলের কিছু তথ্য ও উপকারিতা জেনে নিন


এক সময়ের কদরহীন টক-মিষ্টি লটকন ফল যেন এখন আধার ঘরের আলো।নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার সম্ভাবনাময় ফল লটকনের চাহিদা এখন দেশ-বিদেশ জুড়ে।
লটকন-ফলের-কিছু-তথ্য-ও-উপকারিতা-জেনে-নিন
বর্তমানে লটকনের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে যা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

পোস্ট সুচিপত্রঃ 

লটকন সম্পর্কে কিছু তথ‍্য

লটকনের বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana যা এক প্রকার টক মিষ্টি ফল।লটকন ফল অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন-হাড়ফাটা,কানাইজু,বুবি,বুগি,লটকাউ ইত‍্যাদি।ইংরেজিতে লটকনকে Burmese grape বলা হয়। লটকন গাছ খাটো কান্ড যুক্ত ঝোপালো এবং উচ্চতা ২৯- ৩৯ ফিট।

পাতার রং সবুজ লম্বাটে ফুলের রং সাদা ধানের শীষের মতো ঝোপায় অনেক ফুল থাকে।একটা সময় কদরহীন থাকলেও বর্তমানে ফলটি শিক্ষিত সমাজে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।নরম ও পুরু খোসা যুক্ত গোলাকার ফলটি পাকলে হলুদ রঙ্গের হয়। সাধারণত এই ফলের ৩ টি বীজ থাকে।

প্রচুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলটি খেতে টক স্বাদের হয়ে থাকে। তবে প্রচন্ড গরমের সময় এটি খেতে স‍ত‍্যিই অমৃত স্বাদ লাগে। এছাড়াও এই ফলে ভিটামিন বি ও বি-২ পাওয়া যায়।

লটকন ফলের চাষাবাদ

জমির ধরনঃ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই লটকন চাষ করা যায় তবে বেলে দো- আঁশ মাটিতে এটি ভালো হয়। এছাড়াও উঁচু ও মাঝারি উঁচ এবং উন্মুক্ত বা আংশিক ছায়া যুক্ত জমিতেও এটি চাষ করা যায়।

রোপণ পদ্ধতিঃ প্রতিটি চারা রোপণের জন্য ৯০ সে:মি গর্ত করে ১০-১৫ দিন পরে গর্ত প্রতি গোবর/জৈব সার ১০-১৫ কেজি এবং রাসায়নিক সার টিএসপি ৫০০ গ্রাম ও এমপি ২৫০ গ্রাম দিয়ে উপরে মাটি চাপা দিয়ে গর্ত ভর্তি করে দিতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন রাখতে হবে। গর্ত থেকে গর্তের দূরত্ব হবে ৬ মিটার এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৬ মিটার।


সাধারণত বীজ হতে এই গাছের বংশ বিস্তার হয়। ১০-১৫ দিন পরে গর্তের মাটি উপর নিচ করে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণের ফলে সকল সার মাটির সাথে মিশে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করবে ও গোবর/জৈব সারের জন‍্য গর্তে সৃষ্ট গ‍্যাস বের হয়ে যাবে এতে চারা মারা যাবে না।

এরপর গর্তের মাঝখানে সোজা করে চারা রোপণ করে চার পাশে ভালো ভাবে মাটি চেপে দিতে হবে এরপর বাঁশের কাঠি দিয়ে চারাটি বেধেঁ দিতে হবে যেন চারাটি বেকে/হেলে না যায় প্রয়োজনে বেড়ার ব‍্যবস্থা করতে হবে এবং চারা লাগানোর পর ১-২ দিন অন্তর পানি দিতে হবে।

পূর্ণবয়স্ক গাছের পরিচর্যাঃ প্রতি বছর একটি পূর্ণবয়স্ক গাছে গোবর/ জৈব সার ১৫-২০ কেজি ইউরিয়া ১ কেজি টিএসপি ৫০০ গ্রাম ও এমপি ৫০০ গ্রাম সার একত্রে মিশিয়ে গাছের গোড়া হতে ১ মিটার দূরে গাছ যতটুকু জায়গা নিয়ে আছে ততোটুকু জমিতে সার ছিটিয়ে মাটি কুপিয়ে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে এবং মরা রোগাক্রান্ত ডাল ছেঁটে দিতে হবে।

অর্থনীতিতে লটকনের অবদান

দেশের অর্থনীতিতে লটকন ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশ বিদেশে চাহিদা থাকায় অনেকেই এখন বাণিজ্যিক ভাবে লটকন চাষ করছেন। বছরে প্রায় ৩০০ মেট্টিক টন ফল বিদেশে রপ্তানি করা হয়। সরকারি ভাবেই ৪০ মেট্টিক টন ফল বিদেশে রপ্তানি করে থাকে।
লটকন-ফলের-কিছু-তথ্য-ও-উপকারিতা-জেনে-নিন
দেশ ও বিদেশ মিলে বছরে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা আয় হয় এই ফল হতে। একমাত্র নরসিংদীতেই বছরে প্রায় ১০ হাজার মেট্টিক টন লটকন উৎপাদন হয়।

দেশে - বিদেশে চাহিদা

লটকন ফল নরম রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশ- বিদেশে এই ফলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর এই ফল দেহের সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। একমাত্র নরসিংদীতেই ৬০০ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হয়।

মৌসুমে যার উৎপাদন প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন। সরকারি বেসরকারি মিলে ৩০০ মেট্রিক টন ফল বিদেশে রপ্তানি করা হয়। দেশ-বিদেশ মিলে যার মোট বাজার মূল‍্য ৩৫০ কোটি টাকা। এই বাজার মূল্য ও চাহিদা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।


লটকন ফলের উপকারিতা

লটকন ফল বিভিন্ন পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল।এতি নিয়মিত খেলে সকল পুষ্টির অভাব পুরন হবে।নিচে লটকনের নানান উপকারিতা আলোচনা করা হল।
  • ভিটামিন সি এর অভাব পুরনঃ লটকন ভিটামিন সি এর মহা উৎস।প্রতিদিন তিনটা করে লটকন খেলে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পুরন হবে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ এমাইনো এসিড ও এনজাইম থাকার ফলে লটকন খেলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ।
  • রক্ত স্বল্পতা দূর করেঃলটকন ফল আয়রনের অন্যতম উৎস ।তাই লটকন রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সহায়ক।
  • দাঁত ও হাড় গঠনঃ এতে আছে ক্যালসিয়াম যা দাঁত ও হাড় গঠন করে।
  • মুখের রুচি বাড়ায়ঃ লটকন টক মিষ্টি হওয়ায় এটি খাবারের রুচি বাড়াতে সহায়তা করে।বমি বমি ভাব দূর করতে এটা বেশ কার্যকর।
  • চর্ম রোগ প্রতিরোধঃ আমাদের শরীরে নানা রকমের চর্ম সমস্যা দেখা যায়। নিয়মিত লটকন খেলে চর্ম রোগ ভালো হয়।
  • ত্বকের যত্নেঃ ত্বকের সুন্দর রাখতে লটকনের ভূমিকা অনেক বেশি।
লটকনের গুনাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। যেহেতু এটি বর্ষাকালীন ফল তাই এই সময় বেশি বেশি লটকন খাওয়া উচিত। 

লটকন খোসার উপকারিতা

লটকনের খোসার উপকারিতা শুনতেই কেমন লাগছে না! হ্যাঁ ঠিকটাই শুনেছেন আপনি। শুধু লটকন নয় এর খোসা আপনার বাসার আসবাবপত্র পরিস্কার করতে ভীষণ উপকারি।
লটকন-ফলের-কিছু-তথ্য-ও-উপকারিতা-জেনে-নিন
কিছু খোসার সাথে তেঁতুল মিশিয়ে চুলায় সেদ্ধ করার পর ঐ পানির সাথে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিলে ঐ পানি ক্লিঞ্জার হিসাবে কাজ করে। 

লেখকের মন্তব্য

লটকন একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। এই গাছ বাড়ির আঙ্গিনায় লাগিয়ে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূর্ণসহ পরিবারের অতিরিক্ত অর্থ যোগান দেওয়া সম্ভব। এছাড়াও দেশের যুবকেরা এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url