পাথরকুচি পাতার জাদুকরী উপকারিতা
পাথরকুচি পাতার জাদুকরী বেশ কিছু আশ্চর্যজনক উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। এই গাছ আপনার বাড়ির আনাচে-কানাচে বিনা যত্নে, বিনা সারে ,বিনা জলে, অনায়াসে বেড়ে উঠতে পারে। এই গাছের পাতা আপনার পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুলের খুশকি পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে খুবই উপকারী।
এই পাতা আপনার ব্লাড প্রেসার ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার এমনকি ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতেও এই পাতা যথেষ্ট উপকারী। এই পোস্টে আজ আমরা আলোচনা করব পাথরকুচি পাতার যথাযথ উপকারিতা, সঠিক ব্যবহার এবং তার সাথে আলোচনা করব এটি কাদের জন্য ব্যবহার উপযোগী নয়।
সুচিপত্রঃ
- পাথরকুচি পাতার জাদুকরী উপকারিতা
- পাথরকুচি পাতা ব্যবহারে সঠিক পদ্ধতি
- পাথরকুচি পাতার অপকারিতা
- পাথরকুচি পাতা যাদের ব্যবহার করা উচিত নয়
- পাথরকুচি পাতার চাহিদা
- শেষ কথা
পাথরকুচি পাতার জাদুকরী উপকারিতা
- কিডনির পাথর অপসারণঃ পাথরকুচি পাতা কিডনি এবং গলগণ্ডের পাথর অপসারন করতে সাহায্য করে। দিনে দুবার দু থেকে তিনটি পাতা চিবিয়ে বা রস করে খেলে পাথরকুচি পাতার জাদুকরী উপকার পাওয়া যায়।
- পেট ফাপাঃ অনেক সময় পেট ফুলে যায়, প্রস্রাব আটকে যায়, বায়ু সরে না। সে ক্ষেত্রে একটু চিনির সাথে এক বা দুই চামচ পাথরকুচি পাতার রস গরম করে সিরকা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে এ সকল সমস্যা কমে যায়।
- ফোড়া সারাতেঃ সর্দি জনিত কারণে শরীরের নানা স্থানে ফোঁড়া দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস এক চামচ করে সকালে- বিকালে এক সপ্তাহ খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
- মৃগী রোগ সারাতেঃমৃগী আক্রান্ত সময়ে পাথরকুচি পাতার রস দুই থেকে দশ ফোটা করে মুখে দিতে হবে। একটু পেটে গেলেই রোগের উপসম হবে।
- সর্দি কাশিঃ অনেক সময় সর্দি কাশি অনেক পুরাতন হয়ে গেলে সহজে সারতে চায় না। এক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার বিশেষ উপকারী। এক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস করে সেটাকে একটু গরম খেত্রে।কুসুম গরম অবস্থায় তার সাথে একটু সোহাগার পানি মিশাতে হবে যেন ২৫০ মিলিগ্রাম হয়।নিয়মিত খেলে সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
- শিশুর পেট বাথায়ঃ শিশুর পেট ব্যথা হলে ৩০ থেকে ৬০ ফোঁটা পাথরকুচি পাতার রস পেটে মালিশ করলে ব্যথার উপশম্ হবে। তবে এক্ষেত্রে পেট ব্যথা নিশ্চিত করতে হবে।
- ত্বকের যত্নেঃ পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এর মধ্যে জ্বালাপোড়া কমানোর ক্ষমতা থাকে। যারা ত্বক সম্বন্ধে সচেতন তারা পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পা্রেন।ব্রন জাতীয় সমস্যা দূর করার জন্য এটা বেশ কার্যকর।
- পাইলসঃ পাথরকুচি পাতার রসের সাথে গোলমরিচ মিশিয়ে পান করলে পাইলস ও অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।পাইলস সাড়াতে পাথরকুচি পাতার জাদুকরী উপকারিতা রয়েছে।
- জন্ডিস নিরাময়ঃ লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে তাজা পাথরকুচি পাতা ও এর জুস অনেক উপকারী। যার জন্য আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত পাথরকুচি পাতা খাওয়ালে সে রোগ মুক্ত হবে।
- ডায়রিয়া বা রক্ত আমায়শাঃ ডায়রিয়া বা রক্ত আময়শা রোগীর জন্য পাথরকুচি পাতা খুবই উপকারী।
- উচ্চ রক্তচাপঃ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মূত্রথলির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পাথরকুচি পাতা নিয়মিত গ্রহণ করলে খুবই উপকার পাওয়া যায়।
- পোকা কামড়ঃ বিষাক্ত পোকার কামড় থেকে রক্ষা পেতে এই পাথরকুচি পাতার রস আগুনে ছেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
- মাথা ব্যথায়ঃ সচরাচর মাথা ব্যথা হলে আমরা কপালে বাম লাগায় কিংবা পেইনকিলার খেয়ে নেই। কিন্তু আমরা জানি না আমাদের এই মাথাব্যথা কমাতে পাথরকুচি পাতার গুরুত্ব কতটুকু। মাথাব্যথা যে কারণেই হোক না কেন যেমন- অতিরিক্ত কাজের পেশার, মানসিক ট্রেস কিংবা মাইগ্রেনের ব্যথা। এক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতা বেটে কিংবা পেস্ট বানিয়ে কপালে লাগিয়ে নিলে পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে মাথা ব্যাথা সেরে যাবে। এক্ষেত্রে আমাদের সেরিব্রাল নার্ভগুলোকে পাথরকুচি পাতা শান্ত করে দেয়। ফলে খুব দ্রুত আমাদের মাথা ব্যাথা সেরে যায়।
- অনিদ্রাঃ দীর্ঘদিন কেউ যদি অনিদ্রা জনিত সমস্যায় ভুগেন তাহলে সে যদি নিয়মিত পাথরকুচি পাতা বেটে কপালে লাগায় তাহলে তার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- জয়েন্টের ব্যথাঃ পাথরকুচি পাতাতে আছে এন্টি ইনফ্লাইমেটারি প্রপার্টি, এনাল জেসি প্রপার্টি, পেইন রিলিভিং এজেন্ট যা সহজেই জয়েন্টের ব্যথা বেদনা কে কম করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে কয়েকটি পাথরকুচি পাতার সাথে একটু লবণ এবং একটু তেঁতুল মিশিয়ে ব্লেন্ড করে পেস্ট বানিয়ে ব্যথা স্থানে লাগালে খুবই উপকার পাওয়া যায়।
- ডায়াবেটিস কমাতেঃ পাথরকুচি পাতা আমাদের শরীরের ইনসুলিন সিক্রাসিস বাড়িয়ে দেয়। তার সাথে সাথে টাইপ টু ডায়াবেটিসদের ইনসুলিন রেজিস্টেন্স সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি টাইপ ওয়ান ডায়বেটিস রোগী হয়ে থাকেন তাহলেও পাথরকুচি পাতা গ্রহণ করতে পারেন। আবার টাইপ টু ডায়াবেটিস হলেও পাথরকুচি পাতা গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সকাল বেলা খালি পেটে দু থেকে তিনটি পাথরকুচি পাতা ধুয়ে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে।
- লিভারের সমস্যা সমাধানেঃ লিভারের যেকোনো সমস্যা যেমন- জন্ডিস, হেপাটাইটিস, হেপাটোমেগালী, অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিস সে ক্ষেত্রেও উপকারিতা দিতে পারে পাথরকুচি পাতার রস।
পাথরকুচি পাতা ব্যবহারে সঠিক পদ্ধতি
- যেকোনো সমস্যার সমাধানে তার ওষুধ ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানাটা খুবই জরুরী। একটানা দুই সপ্তাহ পাথরকুচি পাতা গ্রহণ করা উচিত নয়। দুই সপ্তাহ পরে এক সপ্তাহ গ্যাপ দিয়ে আবার দুই সপ্তাহ ব্যবহার করতে হবে।সঠিক নিয়ম না মেনে ঔষধ সেবন করলে উপকারিতার চাইতে অপকার টাই বেশি হতে পারে।
- একই পাথরকুচি পাতা বেটে পেস্ট করে খেতে পারে। এতে করে শরীরের জ্বালাপোড়া অনেক অংশে কমে আসবে। পাথরকুচি পাতা রস করে প্রয়োজন অনুযায়ী রসের সাথে গোলমরিচ, মধু সহ অন্যান্য উপাদান মেশাতে পারেন।
- কিডনি সমস্যার সমাধানের জন্য পাথরকুচি রস খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। সরাসরি পাথরকুচির পাতায় চিবিয়েও খেতে পারেন আবার রস করেও খেতে পারেন। তবে অবশ্যই সঠিক নিয়ম জেনে সেবন করবেন।
পাথরকুচি পাতার অপকারিতা
উপকারিতার পাশাপাশি পাথরকুচি পাতার কিছু বিশেষ অপকারিতা রয়েছে।নিচে এগুলো আলোচনা করা হলোঃ
- অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার ফলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- পাথরকুচির রস সেবনের ফলে পেটে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন - ক্ষুধামন্দার সৃষ্টি হতে পারে।
- ছোট শিশু যাদের বয়স ১২ বছরের নিচে তারা পাথরকুচি পাতা খেলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
পাথরকুচি পাতা যাদের ব্যবহার করা উচিত নয়
- সর্বপ্রথম যাদের হার্টে কোনরকম সমস্যা আছে। সে ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- গর্ভবতী মায়েদের পাথরকুচি পাতা খাওয়া উচিত নয়।
- ১২ বছরের নিচে যে সমস্ত শিশুর রয়েছে সে সমস্ত শিশু পাথরকুচি পাতা ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে।
পাথরকুচি পাতার চাহিদা
পাথরকুচি পাতাকে ঔষধি উদ্ভিদের তালিকায় অন্যতম স্থান দেওয়া হয়। এর পাতা- শিকড় সহ পুরো গাছ বিভিন্ন চিকিৎসায় ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাম,কান্সার, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর করতে পাথরকুচি পাতা অত্যন্ত কার্যকর।
চর্মরোগ, খুশকী, দাঁদ ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে পাথরকুচি পাতার রস ব্যবহার করা হয়। রক্ত পরিশোধন করে শরীরকে বিষমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। পাথরকুচি পাতা বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক রোগের চিকিৎসায় পাথরকুচি পাতার ব্যাপক ব্যবহার।
ফলে দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।মানুষ বাড়ির চারপাশে বা বাড়ির ছাদে টবে পাথরকুচি গাছ লাগাতে পছন্দ করছে।
শেষ কথা
আজ এই পোস্টে আমরা যে গাছের পাতার গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করলাম সেটি একটি মেডিসিন প্ল্যান্ট। হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে এ পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে।আপনারা যদি পোস্ট টি পরে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের সাথেই থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url